হাফসা পড়ালেখা করেছে আ্যারাবিক লাইনে।চাচার কাছেই কুরআন হিফয শেষ করেছে অল্প বয়সেই।তবে ফিকহ সহ অ্যারাবিক বইয়ের পাশাপাশি পড়ছে সাইকোলজি নিয়ে।সাইন্সের বিভিন্ন বিষয়ের বইয়েও চরম আগ্রহ ওর।ইসলামিক বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশনের বইও সংগ্রহে আছে ওর নিজের লাইব্রেরীতে।
কেটে গেলো আরো দূটি বসন্ত।ষোড়শী কিশোরী পা দিলো অষ্টাদশে। মামা সায়িদ আনসারের ছেলে রাদ আনসার দেশে এসেছে।পেশায় সে একজন সাইন্টিস্ট।ভালো এপার্টে জব করছে।মামার ইচ্ছা হাফসাকে উনার ছেলের স্ত্রী বানানোর।উনার জানামতে এখনকার জেনারেশনে হাফসার মতো মেয়ে পাওয়া দূষ্কর।রাদ খুব ছোটোবেলা ওকে দেখেছিলো।মামা হাফসার সাথে তার বিয়ের কথা উঠালে রাদ জানায় তার কোনো আপত্তি নেই।
আরহাম তাজওয়ার প্রথম বার্তাতেই বললেন, ‘আপনি কি আমার মাসনা হবেন?’ মাসনার কথা শ্রবণ হতেই হাফসা যেন পাথরে পরিণত হলো।মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা যেনো বন্ধ করে দিলো।কোনোদিন যা কল্পনাও করেনি সেটাও সত্যি হতে পারে?কয়েক মিনিট স্থির থেকে নিজেকে সামলে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
হাফসা ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে অন্ধকার রুম।ড্রীম লাইটে চারপাশ আধো আলোয় দৃশ্যমান।উঠতে গেলেই নিজেকে খুব ভারী মনে হয়।হাফসার নড়াচড়া পেয়ে তিনি লাইট অন করলেন।হাফসা চোখ কুঁচকে তাকালো লাইটের তীব্র আলোয়।নিজেকে আপাদমস্তক দর্শন করে দেখলো এখনো আগের অবস্থায়’ই আছে।সাজসজ্জা,ভারী ল্যাহেঙ্গা!
আরহাম তাজওয়ার একবার আহমাদের দিকে তাকালেন। অতপর রাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নেভার এভার।নাউ সি ইজ মাই ওয়াইফ।আমার অনুমতি ব্যতীত আপনি তাকে পাওয়া তো দূরের কথা উনার ছায়াটুকুও দেখতে পারবেন না।ঝামেলা আমার মোটেও পছন্দ নয়।আই রিকুয়েস্ট ইউ আপনি উনাকে ভুলে যান।উনি আপনাকে চান না।উনি খুশি থেকেই স্বইচ্ছায় আমাকে বিয়ে করেছেন।’
ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় রুমটা হালকা আলোকিত। আরহাম দরজায় নক করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলেন।শেলফের পাশে হুইল চেয়ারে মাথা লাগিয়ে ঘুমিয়ে আছেন মাইমুনা।
‘ভালো যেমন বাসবো শাসন ও করবো।আপনি যদি উনার প্রতি জেলাস হোন আমি আপনাকে শাসন করবো।আর উনি হলে উনাকে।দূজন আপন হয়ে থাকবেন।হিংসা,ঈর্ষা এ দূটো জিনিস কখনোই যেনো আমার প্রিয়তম স্ত্রীদের মধ্যে না দেখি।”ভালো যেমন বাসবো শাসন ও করবো।আপনি যদি উনার প্রতি জেলাস হোন আমি আপনাকে শাসন করবো।আর উনি হলে উনাকে।দূজন আপন হয়ে থাকবেন।হিংসা,ঈর্ষা এ দূটো জিনিস কখনোই যেনো আমার প্রিয়তম স্ত্রীদের মধ্যে না দেখি।’
তখনি হঠাৎ কপালে কারো উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে হৃৎপিণ্ড ধক করে ওঠলো।বুকের ভেতরটা দ্রীম দ্রীম শব্দে বেজে উঠলো।আরহাম পরম আবেশে চোখ বুজে নিলেন।এ যেনো উমায়েরের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামি উপহার।হাফসা সাথে সাথে সরে গিয়ে গুটিসুটি মেরে রয়।আরহাম কিছুক্ষণ মুচকি হেসে তাকে আবারো কাছে টেনে নিলেন।
ডিনারেও হাফসা চুপচাপ ছিলো।আরহাম মাছের কাটা বেছে বেছে দূপাশে দূজনকে খাইয়ে দিচ্ছেন।দূই লোকমা খাওয়ার পর হাফসা আরহামকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘এবার আপনি খান।’ উনি আবার দিতে চাইলে হাফসা উনাকে রিপিট করে।অথচ মাইমুনা একবারও উনাকে খাওয়ার কথা বলেননি।
উনার খালি বুকে তাকাতে হাফসা লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছিলো।উনি চিবুক ধরে বললেন, ‘লজ্জাবতী লাজুকলতা এত সাইনেস কই থাকে?এত্তো সাইনেস নিয়ে পিচ্চি হয়ে এত বড় মানুষকে বিয়ের চিঠি দিয়েছিলেন কীভাবে হুমম?’ : ‘জ্ জানিনা।আবেগ ছিলো।’ : ‘আবেগ ছিলো মানে?আমাকে ভালোবাসেন না?’
‘আজ যেনো এসে মাইমুনার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না শুনি ঠিক আছে?’ হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।লজ্জায় নয় অপমানে। ‘আসি টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফিজ।’ অতপর সালাম বিনিময় শেষে তিনি চলে গেলেন।
রুমে এসে দেখলেন হাফসা নামাজ পড়ছে। হিজাবের নিচ দিয়ে যখন হাতটা তুলে দোয়া করতে লাগলো তখন দেখা গেলো উনার হাতে সাদা ব্যান্ডেজ পেঁছানো, ব্যান্ডেজ পেরিয়ে ছোপ ছোপ রক্ত ভাসছে।এ চিএ দেখেই আরহাম দমে গেলেন।হাফসা জায়নামাজ থেকে উঠে কাবার্ডে গিয়ে হাতে কিছু একটা করছিলো।আরহাম নক করলেন না, পেছন থেকে এগিয়ে গেলেন।
হাফসা নিচে নামতেই আরহাম ওর সামনে এগিয়ে আসলেন।হাফসা একেবারে কাছে থেকে উনাকে দেখলো।অতিরিক্ত রাগে উনার কান লাল টকটকে হয়ে আছে।কপালের শিরা নড়ছে বারবার।সাদা মুখশ্রীখানা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। ‘উনার সাথে খারাপ বিহ্যাভ করেছেন আপনি?’
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই হাফসা পাশে থাকা আরহামকে দেখে চমকে গেলো।মানুষটা একদম জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।তখনই খেয়াল করলো ব্ল্যাঙ্কেট টা তো ওর গায়ে।কিন্ত রাতে তো ছিলো না।উনার কি ঠান্ডা লেগেছিল?উনি তো শেয়ার করতে পারতেন?করলেন না কেন?’
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলো।হাফসা কলিং বেলের শব্দে বারান্দায় বেরোলো।দোতলা থেকে দেখছে আশেপাশে কোনো ম্যাড নেই।কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। দরজা কেন কেউ খুলছে না।মায়ের শরীর ভালো না,তাই শুয়ে আছেন।ওষুধ খেয়ে ঘুমালে উনি লম্বা ঘুম দেন।কিন্তু আপু তো গিয়ে খুলতে পারেন।আর সার্ভেন্ট?সবাই গেল কোথায়?
‘কি হয়েছে আরহাম?তুমি এর আগেও কেঁদেছো।হাফসাও কেঁদেছে দেখলাম।মেয়েটা কিছু বলে না।সবকিছু নিজের ভেতর চেপে রাখে।কি হয়েছে দূজনের?কোনো কিছু নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে?বলার মতো হলে বলো আমাকে।’ আরহাম কাঁদোকাঁদো হয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বললেন, ‘সি হার্টস মি আম্মু।’
আরহাম নিচে নামতে নামতে কলিং বেল বাজলো।এত সকালে কে হতে পারে?নিউজপেপারের লোক হয়তো!সন্দেহ বশে দরজা খুলতেই আরহাম চমকে গেলেন।অল্পক্ষণের জন্য নিজের চোখ আর মস্তিষ্ক কে যেনো বিশ্বাস করতে পারলেন না।
হাফসার মনটা ভার হয়ে আছে বিকেলে রাদ’ ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর থেকে।আরহাম বিকেলেও ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলেন।হাফসা অজুহাত দিয়ে চলে আসে।কথা বলে নি।কেন জানি অসহ্য লাগছে সবকিছু। একটা বিয়ে কিছু মানুষের জীবন কত অদ্ভুত ভাবে পাল্টে দিলো।যেমন আমি নিজে।তেমনি রাদ ভাই!
উমায়েরের বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা ফুল স্পীডে গাড়ি রান করে এসেছেন।রাগ কমেনি এতক্ষণ পর্যন্ত।নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিতেই বুঝতে পারলেন রাগটা অহেতুক।রাগটা না করলে এই শেষনিশিতে উনার প্রাণস্পর্শীর কাছেই হয়তো ঠাঁই থাকতো!
আরহাম ওপর থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন। আব্বুর মুখে শাস্তি শুনে আর বের হওয়ার সাহস পান নি।নাহলে উমায়ের এর সামনে কি নয় কি শাস্তি দিবেন আর মানসম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে। ‘কি করেছে কি আমার ছেলে?আমার ছেলেকে শাস্তি দিবেন?’